৪৩। বঙ্গবাণী ১৩ জুন সম্পাদকীয়ঃ বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

কম্পাইলারঃ সৌ রভ

<৬,৪৩,৮৩-৮৪>

.

বিচারের বাণী…… কাঁদে

.

বিশ্ববাসীর নিকট আমাদের আকুল প্রার্থনা- তাঁর ইয়াহিয়া চক্রের বিচার করুন। অন্যায়ের যদি বিচার না হয়, তাহলে সত্যতা, মানবতা, ন্যায়বিচার- এসব বলে আর বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা যেন না হয়। কারণ এই শব্দগুলি যদি শুধু মুখেই বলা হয়- কিন্তু সেগুলিকে যদি কর্মে ব্যবহার তা বাস্তবে প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে সেই বলা কথাগুলি শুধু বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে না- প্রহসনে রূপান্তরিত হয়। তখন সেই ভাল ভাল কথাগুলির উপর মানুষ ক্রমে আস্থা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে এই ভাল কথাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র নির্মম হয়ে উঠে। ফলে তাদের অত্যাচারের মাত্রাও যায় বেড়ে। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলি মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রতিষ্ঠান করেছেন- বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বহু মানবতার বাণী প্রচার করেছেন। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলেছেন। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বড় বড় বুলি আওড়িয়েছেন। বিশ্ববাসীকে আশার কথ শুনিয়েছেন।এখন দেখা যাচ্ছে তা শুধু কথায় রয়ে গেছে- বাস্তব রূপায়িত হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এখানকার মানুষের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের জন্য ( একমাত্র ভারত ছাড়া ) কেউ কিছু করলেন না বললেই হয়। যেটুকু ও বা কেউ কেউ করলেন তা বাংলাদেশের শত্রুকে তারিয়ে দেওয়ার পক্ষে উপযুক্ত নয়। বরং এই মৃদু প্রতিবাদে ইয়াহিয়া চক্রের অত্যাচার আরও বেড়ে গেল। নির্বিচারে নির্যাতন ও গণহত্যায় বাংলার আকাশ বাতাস বিষাক্ত করে তুলল।

.

গত দুই মাসের যুদ্ধে বাংলা প্রায় ১০ লক্ষ সাধারণ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। প্রায় ৪০/৫০ লক্ষ জনগণ ছিন্নমূল লতার মত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্চর্য  হতে হয় এ বিষয় নিয়ে বিশ্বের বৃহৎ শক্তি মাথা ঘামাচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে নির্লজ্জ হত্যার নজির এক ইয়াহিয়া ছাড়া অন্য কোন ইতিহাসে পাওয়া যায় না। লক্ষ লক্ষ নারীর সতীত্বকে বিনষ্ট করা, তাদের উলঙ্গ করে মাঠে ছেড়ে দেওয়া ও ঘরে আবদ্ধ করে রাখা, একই মেয়ের উপর পর পর কয়েকজন নরপশুর আত্মীয়ের সামনে অত্যাচার, স্তন কেটে ফেলে পিতাকে উপহার দেওয়া, স্ত্রী-লিঙ্গে বেয়োনেট দিয়ে খোঁচান, শিশুকে ধরে পা চিরে বা গাছে আছাড় দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা, হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে দাঁড় করিয়ে রেখে গুলি করে হত্যা, শহর ও গ্রামের বাড়িঘর নির্বিচারে ধ্বংস করা ও জ্বালিয়ে দেওয়া, মানুষের ধান-চাল, সোনা অর্থাৎ যা কিছু সম্পদ, সবই লুণ্ঠন করা। এসবেও যদি বিশ্ব বিবেক কাতর হয়ে না ওঠে এবং প্রতিকারের জন্য কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণ না করে- তা হলে মানবতা, বিশ্বশান্তি, বিশ্বপ্রেম প্রভৃতি শব্দের মূল্য কোথায় ? আজ মানবতা পৃথিবীর দ্বারে কেঁদে মরছে। এরপরও কেউ যদি action না দিয়ে শুধু শান্তির কথা বলে- তা প্রহসন ছাড়া আর কি হতে পারে?

.

তাই আমি বিশ্বকে আহ্বান করে বলতে চাই- মানবতা ও বিশ্বশান্তিই যদি সকলের নিকট শ্রেয় ও আদর্শ হয়- তাহলে অত্যাচারী ইয়াহিয়া বিচার করুন। মানবতার আহ্বানকে যদি আপনারা মর্যাদা দেন তাহলে শয়তান-রুপী ইয়াহিয়ার অত্যাচারে বাস্তব চেহারা বাংলায় এসে দেখে শুনে যান এবং সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আপনারা ন্যায় বিচার করুন। এবং এই জঘন্য নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধ করুন।তা না হলে পৃথিবীতে মানবতার মৃত্যু ঘটবে এবং ‘বিশ্বশান্তি’ ‘বিশ্বপ্রেম’ শব্দগুলির ভাবার্থের কোন মর্যাদাই থাকবে না। যে ন্যায় বিচার স্বর্গীয়- তা কেঁদে মরবে। বিশ্বের বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তির আকুল আবেদনে বৃহৎ শক্তিগুলির কোন মর্যাদা দেবেন না ? আমার সোনার বাংলার এ দশা দেখে শুধু মনে পড়ে- “আমি যে দেখেছি প্রতিকার শক্তি অপরাধে- বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।

Scroll to Top