৬৫| আর এক শহীদ গণপরিষদ সদস্য নজমুল হক সরকার (৪৬৪)
সুত্র – দৈনিক বাংলা, ১০ এপ্রিল, ১৯৭২
আর এক শহীদ গণপরিষদ সদস্য নজমুল হক সরকার
৩৪ বছর বয়স্ক নজমুল হক সরকার ২৫ শে মার্চের কালোরাতে রাজশাহী শহরের এক গোপন স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঐ রাতেই দেড়টার দিকে হানাদার বাহিনী জনাব সরকারের রাজশাহী শহরের রানীবাজারস্ত বাস ভবন ঘেরাও করে। সেই সময় বাড়িতে কয়েকজন দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া কেউ ছিলেন না।
বিপদের আভাস পেয়ে জনাব সরকার সন্ধায় তাঁর পরিজনের বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেন। এবং নিজেও আত্মগোপন করেন। কিন্তু বিবেকের দারুণ দংশন সহ্য করতে না পেরে এবং কর্তব্যের আহবানে রাত আড়াইটার দিকে রিক্সা করে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাত্রা করেন মূল্যবান কাগজপত্র সরানোর উদ্দেশ্যে।
পথিমধ্যে তিনি হানাদার বাহিনীর একটি জীপের সম্মুখে পড়ে যান। সেখানেই জল্লাদের গুলিতে তিনি শহীদ হন। গুলি করার পর হানাদাররা তাঁর লাশ ট্রাকে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। জনাব সরকার গত সাধারণ নির্বাচনে রাজশাহী ৮ (এনই-৩৭) থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ছয়জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং রাজশাহী জেলার মধ্যে সর্বাধিক ভোট পেয়ে জাতীয় পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই জনাব সরকার আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। ১৯৬২ সালের গণআন্দোলন থেকে শুরু করে তিনি সব সময়ই বাঙালীর অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছে।
রাজশাহী কোর্টের এই তরুন এডভোকেট অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি পরপর দু’বার রাজশাহী উকিল সমিতির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। মিষ্টিভাষী, সুবক্তা, সাহসী, নজমুল হক আওয়ামী লীগের কর্মী মহলে নজমুল ভাই নামে পরিচিত ছিলেন।