৭৫। ওরা সাংবাদিক মেরেছে (৪৮২)
ওরা সাংবাদিক মেরেছে
সুত্র – বাংলার বাণী, বিশেষ সংখ্যাঃ ‘বাংলাদেশে গণহত্যা’, ১৯৭২।
নিজামুদ্দীন আহমেদ,সাংবাদিক জগতে একটি বিশিষ্ট নাম। এই নামটির সাথেই সম্পর্ক ছিল, পিপিআই,বিবিসি,এপিএ,ইউপি,আই’ র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা চূড়ান্তরুপ নেয়ার প্রাকমুহুর্ত পর্যন্ত বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের ( বিবিসি) অনুষ্টান শুনতে গিয়ে যেসব সাংবাদিকের পাঠানো সংবাদ শুনতে বহু লোক উদগ্রীব হয়ে থাকতেন তাদের মধ্যে নিজামুদ্দীন অন্যতম। এখানে বিবিসির সংবাদ ঘোষকদের কন্ঠ থেকে খবর ভেসে আসে নিয়মিত প্রতিদিন। কিন্তু শোনা যায় না একটি ঘোষনা ঢাকা থেকে আমাদের সংবাদদাতা নিজামুদ্দীন আহমেদ খবর পাঠিয়েছেন। কয়েকমাস আগে পর্যন্ত সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতো,তাঁর পাঠানো সংবাদ শোনার জন্য,আর অবাক হয়ে ভাবতো কি দূরন্ত সাহস লোকটার,সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে কেমন করে তিনি সেদিন পাঠিয়েছেন খবরের পর খবর। বাংলাদেশ পাক বর্বর বাহিনীর হত্যাকান্ড আর ধ্বংসলীলা খবর পাঠিয়ে জাগিয়ে তুলেছিল বিশ্ব মানবতাকে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের এক একটি দু:সা্হসিক অভিযান সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করে অনুপ্রানিত করে তুলেছেন বাংলাদেশের মানুষকে।
আলবদর তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ১২ ই ডিসেম্বর দুপুর ২ টায় তাঁর একান্ত প্রিয়জনের মাঝ থেকে। সেদিন তাঁর প্রিয়জন তাঁর স্ত্রী,১১ বছরের মেয়ে শিল্পী, ৯ বছরের রিমি আর ছোট্ট বাপ্পি অবাক বিস্ময়ে দেখেছিল তাদের প্রিয়জনকে খাবাত টেবিল থেকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা, ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলোর আকুল আর্তনাদেও নরপিশাচদের মন এতটুকু টলেনি। তাকে নিয়ে যাওয়ার পর ছোট্ট শিল্পী,রিমি,বাপ্পি তাদের বাবার ফিরে আসার অধীরতর অপেক্ষায় কাল কাটিয়েছ, মিসেস আহমেদ দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন বারবার কিন্তু সবকিছুই নিস্ফল। বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছিল তার বন্ধুবান্ধব তাঁর সৎ সাহসের জন্য প্রসংশা জানাতে,তাঁর নির্ভীকতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু নিজামুদ্দীন আহমেদ আর ফিরে আসেননি তার প্রিয়জনের মাঝে।
সাংবাদিক জগতে নিজামুদ্দীন পুরিচিত দীর্ঘদিনের,ছাত্রাবস্থায়ই তিনি জড়িয়ে পরেন এই পেশায়,এবং সে সময় তিনি ‘ সিভিল এন্ড মিলিটারি গেজেট’, দৈনিক মিল্লাত ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। এরপর তিনি তদানিন্তন পিপি আইর প্রথম ও একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৮ সালে। পরবর্তী পর্যায়ে ওই প্রতিষ্টানকে তিনিই সাবেক পূর্ব পাকিস্থানে গড়ে তুলেন এবং ১৯৬৪ সালে এর সম্পাদক হন। নিখোঁজ হবার দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের সহকারী কর্মকর্তা।“