সাক্ষাৎকারঃ হাবিলদার জয়নাল আবেদীন

<৯, ৯.৪, ২৮৭-২৮৮>

সশস্ত্র প্রতিরোধে রংপুর
সাক্ষাৎকারঃ হাবিলদার জয়নাল আবেদীন

-১১-১৯৭৪

 

২৫শে মার্চ আমি ১০ নং শাখার রংপুর ডবল সুতি বিওপি’তে হাবিলদার পদে বহাল ছিলাম। ৭ই মার্চের পর পাঞ্জাবী অফিসাররা ক’দিন পরপর গোপনে মিটিং করত , সেখানে বাঙালিদের ডাকতো না।এইসব দেখে আমাদের ধারণা হয়েছিল একটা কিছু হতে পারে।

 

১০ নং শাখার কমান্ডার ছিল একজন ইউপি। সহকারী ক্যাপ্টেন ২জন ছিল।

(১)ক্যাপ্টেন ভুট্টো খান ছিল (পাঞ্জাবী) এবং

(২) অপরজন বাঙালি নওয়াজেশউদ্দিনের ৫টি কোম্পানী ছিল এই শাখাতে। একটি সাপোর্ট প্লাটুনও ছিল। কোম্পানীগুলো  ছিলঃ চিলমারী, কমান্ডার ছিল সুবেদার আবদুল মান্নান, অপরটি বাগভান্ডারে  যার কমান্ডার ছিল বিহারী। মোগলহাটে অপর আরেকটি কোম্পানী ছিল যার কমান্ডার ছিল সুবেদার আরব আলী। পাটগ্রামে একটি কোম্পানী ছিল, কমান্ডার ছিল সুবেদার বোরহান উদ্দিন। উইং হেডকয়ারর্টার কোম্পানী কমান্ডার ছিল এতয়ার খান। সাপোর্ট প্লাটুন কমান্ডার ছিল সুবেদার নূর মোহাম্মদ।

 

২৬শে মার্চ বিকালে ঢাকার পিলখানার হত্যাযজ্ঞের খবর পেলাম। ঠাকুরগাঁওয়ে ৯নং শাখা ছিল। তারা ২৬ শে মার্চ বিদ্রোহ করে। এ খবর আমরা পেলাম।

 

২৭শে মার্চ সেক্টর কমান্ডার তারিখ রসুল ১০ নং শাখাতে টেলিফোন করেন। সেই টেলিফোন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ ধরেন। সেক্টর কমান্ডার জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি কে? নওয়াজেশ বললেন  ‘আমি ভুট্টো – এখনই ক্যাপ্টেন নওয়াজেশকে হত্যা কর’।

 

ক্যাপ্টেন নয়াজেশ পাকিস্তানীদের মতলব বুঝে জীপ নিয়ে সীমান্তের দিকে চলে যান। নায়েক সুবেদার নূর মহাম্মাদও (সাপোর্ট প্লাটুন কমান্ডার) গাড়ী নিয়ে সীমান্তে যায়। গাড়ীতে বাংলাদশের পতাকা নিয়ে সকল কোম্পানীকে তিস্তা ব্রিজে ক্লোজ হতে বলেন।

 

মোগলহাট কোম্পানী লালমনিরহাট আসলো। পাটগ্রাম কোম্পানী তিস্তা চলে আসে ।চিলমারী কোম্পানীর কিছু তিস্তার পারে চলে আসে। আমরা তিস্তার পারে ৪০০/৫০০ জনের মত ইপিআর ডিফেন্স নিই ব্রিজ পর্যন্ত। নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ। ৩০শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত এখানেই পাকবাহিনীর সাথে প্রায় রোজ যুদ্ধ হয়েছে। পাকবাহিনী ব্রিজ অতিক্রম করে এপারে আসতে পারেনি। ৫ই এপ্রিল পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে আমরা পিছু হটি। আমরা ফুলবাড়ি থানাতে ডিফেন্স নিই ছোট্ট একটি নদীর পারে। তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম রোড আমরা অবরোধ করে থাকি। ১৩ /১৪ এপ্রিল আমরা ৩টি কোম্পানী নিয়ে লালমনিরহাটে আসি পাক ঘাঁটি আক্রমণের জন্য। আমরা ঐ যুদ্ধে টিকতে ব্যর্থ হই। আমাদের ৬/৭ জন শহীদ হন। আমরা আবার ফুলবাড়ী চলে আসি।

 

এপ্রিলের ২৫ তারিখে ১০নং শাখার সকল ফোর্স পাটেশ্বরীতে নিয়ে আসেন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ। নাগেশ্বরী থানাতে হেডকোয়ার্টার করা হয়। এখানে আমরা পাক্কা ডিফেন্স করি। আনসার-মুজাহিদসহ ১২০০ জনের মত ফোর্স ছিল। ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬শে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় পাকবাহিনীর সাথে খণ্ড যুদ্ধ হয়।

 

২৪শে জুন থেকে পাকবাহিনী ব্যাপকভাবে চারিদিক থেকে শেলিং ও বিমান হামলা করে। ২৬শে জুন আমাদের সকল ডিফেন্স থেকে মুক্তি বাহিনী পিছু হটতে থাকে এবং পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এখানে কিছু শহীদ হন। এখান থেকে সুবেদার বোরহান উদ্দিনের সাথে আমাদের কোম্পানী সোনারহাট সেক্টরে চলে যায়। সুবেদার আরব আলী এবং অন্যান্যরা ভারতের শ্যামগঞ্জ পৌঁছায়। আমরা সোনারহাটে নদীর পারে ডিফেন্স নিই ৩০শে জুন। আগস্টের ২২ তারিখ পর্যন্ত এখানে আমরা ডিফেন্স করে থাকি। এই সময়ের মধ্যে সোনারহাট ব্রিজে কয়েকদন পর পর পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ বাধতো।

Scroll to Top