১১১। ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে

আল নোমান

<৬,১১১,১৮২>

শিরোনামঃ বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে (রাজনৈতিক ভাষ্যকার)

সংবাদপত্রঃ সোনারবাংলা (১ম বর্ষঃ ৮ম ও ৯ম সংখ্যা)

তারিখঃ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১

.

বাংলাদেশে আজ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে। হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীকে বাংলাদেশের মাটি থেকে চিরতরে উৎখাত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম করার জন্য স্বর্ণ প্রসবিনী বাংলার বীর সন্তানগণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে। গত ৬ মাসের যুদ্ধে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দখলীকৃত এলাকা উদ্ধারের জন্য পালটা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ফিরে পাব। ঠিক এই মুহুর্তে বিশ্বের বিভিন্ন মহল বিশেষ করে বৃহৎ শক্তিবর্গসহ কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র বাংলাদেশ সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু এই রাজনোইতিক সমাধানের কাঠামোটা কি তা কেউ স্পষ্ট ভাষায় বলেননি। বাংলার মানুষের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে নবগঠিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা কাউন্সিল ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান পূর্ণ স্বাধীনতা। আমরা সেই রাজনৈতিক সমাধান মেনে নিতে পারি, যাতে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়।

.

কারন যারা রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেন, তাদের একটা উপলব্ধি করতে হবে যে কি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ৮০ লক্ষ মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয়গ্রহণ করেছে এবং কেন স্বাধীনতা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। বাঙ্গালীরা চিরদিন শান্তিপ্রিয় জাতি এবং আওয়ামী লীগও একটি গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাই তারা ২৫শে মার্চের পূর্বে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চেয়েছিল; কিন্তু খুনি ইয়াহিয়া তা হতে না দিয়ে বাংলার মানুষের উপর শোষণ আর শাসন অব্যাহত রাখার জন্য কুত্তা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে খুন করেছে। তাই নিরীহ নিরস্ত্র নিরাপরাধ ১০ লাখ বাঙ্গালীকে হত্যা করে, দেশত্যাগ করতে বাধ্য কর, লাখো মা বোনের ইজ্জত লোটার পর আর পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সংগে বাঙ্গালীদের বসবাস সম্ভব নয়। ন্যায্য অধিকারের পরিবর্তে শোষণ অপমান আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীরা ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে। অহিংস রাজনীতির অনুসারী দল আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়েছে  সশস্ত্র সংগ্রামের পথে নামতে। তাই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে হয়েছে। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রের শপথ নিয়ে মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী মানুষের নামধারী বর্বর জানোয়ারদের খতম করার জন্য বাঙ্গালীরা প্রস্তুত। মৃত পাকিস্তানের উপর উঠবে বাঙ্গালীর বাংলাদেশ যেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। গড়ে উঠবে এক শোষণমুক্ত সোনার বাংলা।

.

এত রক্ত, জীবনহানি, সম্পত্তি লুট, ইজ্জতহানির পরও যদি কেউ ভাবেন যে, বাঙ্গালীরা ঐ বেঈমানদের সংগে বসবাস করবে-তারা মস্ত বড় ভুল করবেন। ইয়াহিয়ার রক্ত কলঙ্কিত হাতে খন্ডিত পাকিস্তান বাঙ্গালীরা জোড়া লাগাবে না। আমরা শহীদদের সহিত বেঈমানী করতে পারি না। তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ যথার্থই বলেছেন “লাখো” শহীদের লাশের তলায় পাকিস্তানের কবর হয়েছে। তাই যারা রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেন, তাদের আমরা একথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চায় যে, বাংলার মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া কোন সমাধান মেনে নিতে রাজি নয়।

Scroll to Top