৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
অ্যামনেস্টি ধোঁকা দেয়ায় বিফল: বিবিসি সংবাদঃ অর্থলোভী মালিক
.
এটা সম্ভবত দুর্ঘটনা না যে ইয়াহিয়া মুক্তিবাহিনীর ডেডিকেটেড সদস্যদের যারা এখন যুদ্ধ করছে তথাকথিত ক্ষমার সদ্য প্রস্তাব দিয়ে মোতালেব মালিক নামক তার বাংলাভাষী স্বদেশদ্রোহী একটি নন-প্র্যাকটিসিং ডাক্তার এর নিয়োগ দিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই, তথাকথিত অফারটি গত চার মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো তৈরি করা হয়েছে ইয়াহিয়া ও টিক্কার খুনীর দলের নিপীড়নের ফাঁকি সফল করার একটি দৃশ্য হিসেবে। ঘোষণাটি এরকম বলে মনে হয়- “, এখন ছেলেরা এখন ফিরে আসো” । তোমাদের এখন ভয় পাওয়ার কারণ নাই, একজন বাংলাভাষী গভর্নর তোমাদের দেখাশোনা করার জন্য আছে।”
ইয়াহিয়া অবশ্যই মরিয়া ছিল, তাই এরকম দুর্বল পদক্ষেপ নিয়েছে। এই চালটি শরনার্থী অভ্যর্থনা কেন্দ্রের থেকেও বেশি হাস্যকর ছিল, যেখানে বিদেশী সাংবাদিকরা শুধু কুকুরদেরই পেয়েছিল যারা পাকিস্তানি আপ্যায়ন গ্রহন করছিল, কুকুরের সংহতি জ্ঞাপনের মাধ্যমে কুকুরীয় কৌতুকের বৃহৎ নির্মম প্রদর্শন। কিন্তু এইবার ইয়াহিয়া এমনকি কুকুরদেরও খুজে পায় নি। কিছু সহজ সরল মানুষ প্রথম বারের মিথ্যা ক্ষমা প্রার্থনাকে বিশ্বাস করেছিল। সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য যারা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল এবং মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে দ্বিধা করছিল তারা ইয়াহিয়া ডাকে সাড়া দিয়েছিল এবং ইয়াহিয়ার ক্ষমার বিষাক্ত মধুর স্বাদ গ্রহন করেছে।
এই হতভাগাদের ঢাকার বুড়িগংগায় ১৫/২০ বান্ডলে ভাসতে থাকা লাশদের সাথে পাওয়া গেছে। তখনো তাদের পরনে আর্মি শর্টস ও ভেস্ট ছিল। কারো শরীরের বেয়নেটের আঘাত ছিল। কিন্তু অধিকাংশই মারা গেছে যখন নরকের খুনিরা তাদের শরীরের শেষ ফোটা রক্ত বের করে দিয়েছে তখন।
সৌভাগ্যবশত খুব অল্পই ইয়াহিয়ার মৃত্যু সংগীতে আটকে পড়েছিল। গণহত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর একজনও সামরিক সদস্য দ্বিতীয় ডাকে সাড়া দেয় নি। আসলে প্রথম গণহত্যার পরই দ্বিধায় ভোগারা মনস্থির করে ফেলে এবং রাতের অন্ধকারে মুক্তিবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যেতে শুরু করে। তারা এখন নিবেদিতপ্রাণ বিশাল মুক্তিবাহিনীর সদস্য, যারা পাকি ভীরুদের দৌড়ের উপরে রেখেছে। প্রথমবারের বিবিসি, একটি অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং পুরাতন সন্দেহজনক গ্রুপ, পরিস্থিতির বাস্তবতা স্বীকার করেছে। কয়েক মাসের জন্য মুক্তিযুদ্ধের উপর নিরবতার পর বিবিসির অবশেষে প্রকাশ্যে স্বীকৃত দিয়েছে যে স্বাধীন বাংলাদেশ একটা বাস্তবতা এবং পাকিস্তানি বন্দুক পরিসীমার বাইরে বসবাসকারী মিলিয়ন মানুষের এর কল্পনায় একে বানানো হয় নি। তার বিশেষ সংবাদদাতা মার্টিন বেল একটি তথ্যকাহিনী শুট করেছে এটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে মুক্তিবাহিনীতে নিজেই একটি সুগঠিত বলবত্ গ্রুপ এবং মুক্ত বাংলাদেশ একটা বাস্তবতা যদিও সমগ্র অঞ্চলের ওপর আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করা হবে । তিনি মুক্তিবাহিনী সদস্যদের মুক্তির দাবির পর্যাপ্ত স্থান দিয়েছেন। তিনি প্রকাশ করেছেন: পাকিস্তানি সৈন্যরা কাপুরুষ। যখন মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা একশনে যায় তারা তাদের জীবন বাচানোর জন্য পালিয়া যায়। তারা এত দ্রুত পালায় যে মুক্তিবাহিনীতে দ্বারা ব্যবহারের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে যায়।
ইয়াহিয়া হয় বোকা অথবা পুরাপুরি পাগল যে এরকম বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাওয়া বাহিনী কলোনিয়াল বাহিনীর ক্ষমার ফাদে পা দিবে যারা তাদের মা, বোন, স্ত্রীদের ধর্ষন করেছে। মোতালেব মালেক নামক এই বাংলাভাষী রাজনৈতিক নপুংসকের নাম ব্যবহার করে তার কৌতুক তার ইসলামাবাদ প্রাসাদের বাইরে কাজ করতে পারবে না।
উপমহাদেশের ভেংগে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি লাইমলাইট থেকে দূরে ছিলেন। এতগুলো বছর-যেহেতু উপমহাদেশের-মোতালেব মালেক বিভক্তির আগে প্রচারের ছটা থেকে দূরে থাকার জন্য পরিচালিত. কিন্তু সেখানে অনেক সাক্ষী তার সাথে যারা বড় হয়েছি হয়. তিনি নিজেকে ড্রেসিং আপ কলকাতার একটি তথাকথিত শ্রমিক নেতা হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন. ধর্মের নামে শোষণ সে মোসলেম শ্রমিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু সেখানে অনেক সাক্ষী আছে তার সাথে যারা বড় হয়েছিল। তিনি নিজেকে ড্রেসিং আপ কলকাতার একটি তথাকথিত শ্রমিক নেতা হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ধর্মের নামে শোষণ করে সে মোসলেম শ্রমিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।
শীঘ্রই তিনি শ্রমিকদের ধর্মঘট দ্বারা ব্যক্তিগত মুনাফার কৌশলের উদ্ভাবক হয়ে ওঠেন। কর্মীদের সামান্য লাভ অথবা কিছুই ছাড়াই ধর্মঘট করাতে বাধ্য করতেন। এদিকে, তার অ্যাংলো-স্যাক্সন কর্ত্তাদের ধন্যবাদ, তিনি তাঁর পারিবারিক নাম ‘মল্লিক’ থেকে বদলে ‘মালিক’ হয়ে গেছে, যাতে তার সাদা বসদের কম প্রচেষ্টার সঙ্গে তার নাম উচ্চারণ করতে পারত। যখন সাদা চলে যায়, তখন তিনি দ্রুত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিরোধী বাংলায় যে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে সংহত দল ছিল তা ধ্বংস করতে সচেষ্ট হন। জিন্নাহ তার আংগুল কলার মত নাড়াত এবং মালিক তাতে কুকুরের মত ঝাপিয়ে পড়ত। তিনি জিন্নার মন্ত্রীসভায় মন্ত্রীত্ব পান বাংলা কোটায় যেখানে একে ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত বাংলার মহান সন্তানদের বঞ্চিত করা হয়।
এখানেই মন্ত্রী জাহাজ মল্লিক ওরফে মালিক এর চেইন শুরু। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী আমলাদের একটি পরোপকারী কামলা হিসেবে প্রমাণিত, আমি বলতে চাচ্ছি, তিনি নিজেকে যেমন একটি পুতুল প্রমাণিত করেন যে তৎকালীন সচিবরা পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করে। এ জন্যই সামরিক-পুজিবাদী-আমলাতান্ত্রিক চতুর গোষ্ঠী যারা পাকিস্তান শাসন করেছে তারা তাকে সুবিধা দিয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত যেদিন রাষ্ট্র বিস্ফোরিত হয়েছিল। মল্লিকের এই গুণাবলীর জন্যই মল্লিক ওরফে মালিক ইয়াহিয়ার প্রিয় ছিল যদিও ইয়াহিয়া প্যাথোলোজিকালি বাঙ্গালীদের বর্ণবাদী ঘৃণার চোখে দেখত।
যা আমি আগেই বলেছি, এই বিভীষণকে নিয়ে ইয়াহিয়া বোকামী করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ নয়। এমনকি মনে হয় যুদ্ধ ঘোড়া জুলফি ভুট্টোও এই বোকামি পুরষ্কারের বাতাস বুঝতে পেরেছিল। মল্লিক ওরফে মালিক তার কাছেও খারাপ মানুষ ছিল। তিনি অনবরত মল্লিক ওরফে মালিককে নিয়োগ দেয়াকে সমর্থন না করার কথা বলেন।
ফুটনোটে বলছিঃ বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকার শ্রোতাদের আমাদের বাজিকরদের সর্বশেষ সংবাদ জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে বাজি ইসলামাবাদ পরবর্তী প্রেসিডেন্ট উপর শুরু হয়েছে। এটা ভুট্টো না ইয়াহিয়া হবে? সর্বশেষ শ্রেষ্ঠতা ১০-২ বিজয়ী হিসেবে ভুট্টোর পক্ষপাতী।
ইয়াহিয়া পাকিস্তান ধ্বংস করেছে। ভুট্টো অবশিষ্টাংশের সমাপ্তি ঘটাতে বিশেষ সুযোগ পাবে।