৪ জুলাই ১৯৭১ ,
“ ইয়াহিয়া তাঁর দেশদ্রোহী খুজে পেয়েছে “
বাংলাদেশের দখলকৃত অঞ্চলে বেসামরিক গভর্নর হিসাবে ভাড়াটে কর্মি মোতালেব মালিককে নিয়োগ দান বাস্তবে পাকিস্তান জান্তার আত্তমসমর্পনের শুরু । এই তথাকথিত ডক্টর যে কখনোই জীবন ধারনের জন্য তাঁর দন্ত চিকিৎসক পেহস্যা নিয়োজিত হয়নি ,সে একজন ভাড়াটে মৌসুমি রাজনীতিক , জনপ্রিয় আন্দোলনের সময় যে পুরোপুরি বিস্থিত থাকে কিন্তু তখুনি মঞ্চে হাজির যখন জনবিরোধী শক্তি জোরপুর্বক রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে । একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে , রাজনৈতিকভাবে সে একজন পরিচয়হীন ব্যক্তি ।এই রাজনৈতিকভাবে অক্ষম লোকের নাম সকল বেআইনী , অগণতান্ত্রিক ,অনৈতিক মন্ত্রীসভা যারা গত বিষ বছর ধরে পাকিস্তানের জনগনের উপর নিজেদের তুলে রেখেছে , তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। এই তথাকথিত ডাক্তারের আর ও একটি অদ্ভুত রেকর্ড আছে যে ইয়াহিয়া এবং তার দলবলের জন্য এই লোকের এক আজব আকর্ষণ কাজ করে ।ঠিক তার ডাক্তারি পেশার মতো সে কখনোই জনপ্রিয় হতে পারে নি , কেউ জানে না কবে হবে । ইহাহিয়া রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বহীন ,দাসত্বের মনোভাব নিয়ে বেঁচে থাকা এই লোক ছাড়া আর কাকেই বা ইয়াহিয়া বিশ্বাস করতে পারে ?
বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকার ভিতরে এবং বাইরে সামান্য সন্দেহ ছিলো যে তথাকথিত গভর্নর তার ব্যক্তিগত ওয়াশরুমের দরজার চেয়ে বড়ো জায়গা তৈরি করতে পারবেনা । এমনকি “পাপেট” শব্দটা ও তার রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অপ্রাসঙ্গিকতা পরমাপ করতে ব্যর্থ ।তবু ইয়াহিয়া পরিকল্পনা করেছে , বিশ্বকে বিশেষ করে বিষম হোয়াইট হাউজ এবং রাগান্বিত বিশ্বব্যাংককে এটা বলবে যে , এই ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের দখলকৃত অঞ্চলের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সে বেসামরিকরন শুরু করেছে । যদিও সত্যিটা হলো , চুড়ান্ত আত্তমসমর্পনের আগে মালিককে বাইরের বিশ্বের কাছে সামনে রেখে তাদের গনহত্যা ,ধর্ষণ ,লুট এবং অগ্নিসংযোগ চলবেই ।এসবই চলছে মার্শাল ল প্রশাসনের সরাসরি পরিকল্পনায় ,সে যে ই হোক । যদি মালিকের একার কোন কর্তৃক থাকতো তাহলে প্রকৃতপক্ষে আর্মি এবং আর্মি ইন্টোলিজেন্স সার্ভিসের জন্য সে একটা স্থায়ী মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়াত ।এটা কোন আনন্দদায়ক দুশ্চিন্তা নয় যে তাদের দুস্কর্মের ভারবাহী ব্যক্তিকে মুক্তিবাহিনীর বুলেটের হাত থেকে তাকে বাঁচানো ।তাকে মুলত গভর্নর হাউজে আনা হয়েছে মাঝে মাঝে জনগণের মাঝে দেখানোর জন্য ।অন্য একজন বাঙ্গালির মৃত্যুর জন্য ইয়াহিয়া চিন্তিত ব্যাপারটা তা নয় , হোক সে সহযোগি বা অন্য কেউ । কিন্তু তার অপরাধের উত্তরাধিকার নেবার মতো খুব কম লোক পাওয়া যাবে । তা সত্ত্বেও এটাই বিশ্বাস ঘাতকতার শেষ কাজ যে ,ডঃ মালিক বাংলাদেশের জনগনের বিরুদ্ধে কাজ করবে।
এরমধ্যে প্যারিস থেকে খবর এসেছে ,ইয়াহিয়া বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন লোকের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার উপর অব্যাহতভাবে আক্রমণ বাড়িয়ে যাচ্ছে ।প্যারিসের দৈনিক “ লা ফিগারো” কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া শেখ মুজিবকে একজন “অপরাধী” এবং “তুচ্ছ ফ্যাসিস্ট” বলে উল্লেখ করে।
ডানপন্থী প্যারিস দৈনিক “লে ফিগারো” কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শেখ মুজিবকে একজন অপরাধী এবং একটি’ নাবালক ফ্যাসিবাদী “বলেছেন। কিন্তু এই অর্ধেক-বুদ্ধি বাংলাদেশের মানুষের তার নাৎসি-শৈলী গণহত্যার সম্পর্কে বড়াই করেছে শুধুমাত্র একটি বাক্য পরে। তিনি নির্লজ্জভাবে গর্ব করে তার সেনাবাহিনীকে পেশাদারী বলে এবং বলে যে যখন তারা হত্যা করে তখন তারা এটা পরিপূর্ণ ভাবে করে। তিনি দৃশ্যত নিজেকে বিশ্বাস করিয়েছেন যে তার সেনাবাহিনী একটি সমানভাবে সজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ রাতে একটি পূর্ণ যুদ্ধ করেছে। সাধারণত সেনাবাহিনীর মেসে শ্রেণীর বা সম্প্রদায়ের ভাষা ব্যবহার করে তিনি দম্ভ করে বলেছিলেন যে “এটা কোন ফুটবল ম্যাচ ছিল না।” দুর্ভাগ্যবশত “লে ফিগারো” সংবাদদাতা তাকে মনে করিয়ে দিতে ব্যর্থ হয় যে তার বর্বর সেনাবাহিনী নিরস্ত্র এবং নিরীহ বেসামরিকদের উপর লেলিয়ে দেওয়া হয় এবং শুধুমাত্র একটি কাপুরুষোচিত সেনাবাহিনীই নারী ও শিশুদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করে। সংবাদদাতার এই বড় ফ্যাসিস্টকে স্মরণ করিয়ে উচিত ছিল যে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম তার পশুরা শুধুমাত্র পেশাদারী দক্ষতায় হত্যা করেনি বরং ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মধ্যে মহান প্রতিভা প্রদর্শিত করেছে। .একটি মহান উদ্দেশ্যর সঙ্গে নিষ্ঠুরতাকে দক্ষতা বলা যেতে পারে ‘কিন্তু অন্যথায়, এটি শুধুই ধর্ষকাম হয়। তিনি বড় ফ্যাসিস্টকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারতেন যে যদি শেখ মুজিব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস না করে তিনি পাকিস্তানি ফ্যাসিস্টদের মাংসের কিমা এবানাতে পারতেন যদি তিনি চাইতেন। এটা তার সভ্য আচরণ যে বড় ফ্যাসিস্টকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ডেইসি আপ ঠেলাঠেলি করার পরিবর্তে ইসলামাবাদে বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন।
প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ইতিহাসের নির্মমতম পরিহাস যে সবচেয়ে কাপুরুষোচিত খুনী ও ঘৃণ্য মিথ্যাবাদি বিশ্বের এখন গণতন্ত্রের ডিফেন্ডার। এখন পর্যন্ত অপরাধের মূল্য পরিশোধ না করার জন্যই তাদের এই স্পর্ধা। কিন্তু ইতিহাস থেকে একথাও জানা যায় যে কিছু দীর্ঘতার অবশেষে ভাল পরিবর্তন আসে। অন্যথায় আজ আমরা হিটলার, মুসোলিনি এবং তজো কে দেখতে পেতাম।