British Parliament Debates Bangladesh

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিতর্ক
বাংলাদেশ

লেবার পার্টির এম পি দের কল্যাণে বাংলাদেশ আবার ব্রিটিশ পারলামেন্ট এর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছিল। ১২০ জন সংসদ সদস্য বাংলাদেশ এর সরকার গঠনের পক্ষে ছিল ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতার বিরোধিতা করেছিল। পাকিস্তানীদের এই জঘন্য গনহত্যা প্রতিরোধ করতে তারা হাউজ অফ কমন্সে মিটিং ও ডেকেছিল।

এটা ছিল তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খুবি সাহসি পদক্ষেপ , রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করতেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর পাকিস্থানীদের গনহত্যার ব্যাপারে যে মতামত তাতে টিকে থাকা উচিত। কিন্তু এই আলোচনার মাধ্যমে স্যার এলেক ইয়াহিয়া খানের ব্যাপারে আরো সতর্ক হতে পারবেন।

সারা বিশ্বের রাজনৈতিক বোদ্ধারা ইতোমধ্যেই বুঝতে পারছিলেন যে ইয়াহিয়া খান কত বড় বিশ্বাসঘাতক ছিলেন এবং তার দল ও সেনাবাহিনী কতটা জঘন্য ও বর্বর ছিল। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের হাত থেকে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে ইয়াহিয়া খান নানা রকম তালবাহানা শুরু করেছিল। পাকিস্তানী মানুষের সাথে নানা রকম শুরু থেকেই সে নানা রকম প্রতারনা করে আসছিল। তিনি আসলেই ছিলেন একজন পাকা অভিনেতা ও ধূর্ত নেতা, যেকোনো সম্মেলনেই তিনি বলতে ভুলতেন না যে তিনি একজন আর্মি ছিলেন। তিনি তার অসুস্থ মানসিকতার লোক বল নিয়ে নীল নকশা আকছিলেন যে পূর্ব বাংলায় কিভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তিনি ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে সাজানো একটি নির্বাচন করেন যার প্রতিটি অর্থ ছিল জনগনের কষ্টের ট্যাক্স এর টাকা। বিদেশীরা মনে করেছিলেন জিনিষটা গুজব কারন একটি গরীব দেশের পক্ষে এত্ত টাকা ব্যয় করা সম্ভব না। কিন্তু তারা আসলে পাকিস্তানী মিলিটারিদের অস্বাভাবিক মানসিকতার সাথে পরিচিত ছিলেন না। শুধু তারা নয় কেউ ই এই ব্যাপারে ধারনা করতে পারেনি। তানা হলে ২৫ মার্চ ইতিহাসের সব চেয়ে নিকৃষ্ট ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটত না। প্রতারক ইয়াহিয়া ও তার দল এত্ত বড় মিথ্যাবাদী ছিল যে এই গনহত্যার পক্ষেও তারা নানা রকম খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করছিল। তিনি ২৬ মার্চ এক সাক্ষাতকারে বলেন, এই ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিলনা, কারন আওয়ামীলীগ এর লোকেরা পাকিস্তানের পতাকা ও জিন্নাহর ছবি ছিড়ে ফেলেছিল। আর্মিদের কেও তারা নানা ভাবে অপমান করেছিল। এভাবে প্রতারক ইয়াহিয়া নানা রকম গল্প ফেদে বিদেশি সরকার কে বোঝানোর চেষ্টা করছিল।

কিন্তু সব ঘটনা এখন দিনের আলোর মতই পরিষ্কার ছিল। ইয়াহিয়া যে কত্ত বড় ঘৃণ্য কুচক্রী তা সবার কাছে প্রকাশ পেয়েছিল। সে যদিও পূর্বে সেনাবাহীনিতে ছিল, কিন্তু এমন জঘন্য লোক ও তার দল ছিল আর্মি দের জন্য , তাদের পোশাকের জন্য একরকম কলংক । পশিচম পাকিস্তান এর লোকদের কাছেও এই আর্মিরা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। ইয়াহিয়া খান এর মধেই বাংলার লোকদের বিরুধে ক্ষমতালোভী , কুচক্রি ভুট্টোকে ব্যাবহার করে ফেলেছিল। এই ঘটনা কে তারা আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।

প্রতারক ইয়াহিয়ার আসল রূপ দেখে পশ্চিমারাও তার বিপক্ষে চলে গিয়েছিল, তারা ও একটি সাধীন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষা করছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি কে স্থিরতায় আনা সম্ভব ছিল যদি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী নজরুল ইসলাম এর কিছু শর্ত এর উপর আলোকপাত করা হত-

১- শেখ মুজিবর রহমান সহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি।

২- বাংলাদেশ থেকে হানাদার বাহিনী সরিয়ে নেয়া।

৩- বাংলাদেশের সরকার কে স্বীকৃতি প্রদান ।

৪- ১৯৪৭ থেকে এখন পর্যন্ত যাযা ক্ষতি হয়েছে বিশেষ করে ২৫ মার্চ কাল রাতের ভয়াবহতা এর ক্ষতিপূরণ দেয়া ।

২৫ জুন ১৯৭১

Scroll to Top