১৩ ই জুলা ,১৯৭১
“ দুর্ভিক্ষ হলো অস্ত্র ,সৈনিকদের জন্য খাদ্য পরিত্রান !
বাংলা বায়াফ্রা নয় “
.
বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার খুনী জান্তার দুটি গুরুত্বপুর্ন উদ্দেশ্য ছিলো ।এক , সম্পূর্ণ সামরিক বিজয় এবং দুই , একটি ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ।প্রথমে সে তাচ্ছিলের সাথে আশা করেছিলো নিশ্চিতভাবেই কয়েকদিনের ভিতরে বিজয় অর্জিত হবে ,যা কোনভাবেই এক সপ্তাহের অধিক সময় নেবেনা এটি এখন ছয়মাস ধরে জয়ের আশায় টেনে হিঁচড়ে নেওয়া একটি যুদ্ধ ।প্রতিটি সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তাদের পরাজিত হয়ে পশ্চাদপসারন করার আমধ্যমেই তা প্রতীয়মান হয় ।একজন ডুবন্ত মানুষের মত ইয়াহিয়া এখন তার পথে যেই আসছে তাকেই খড়কুটোর মতো আকড়ে ধরতে চাইছে ।
তার সর্ব শেষ কৌশল হলো বাংলাদেশের দখলকৃত অঞ্চলে একটি দুর্ভিক্ষ তৈরি করা ,যতোটা ব্যাপকভাবে সম্ভব ।তার আশা ছিলো এই দুর্ভিক্ষে যখন বাংলাদেশে লক্ষাধিক লোক মারা যাবে ,প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে তার ঔপনিবেশিক সৈনিকেরা স্থায়ী বিজয় অর্জন করবে । সাম্প্রতিক নানাবিধ ঘটনায় তার নারকীয় ,ধর্ষকামী ,পাগলামিপুর্ন দমননীতি তিনগুন বেড়ে যাওয়া এটাই প্রমান করে ।মুক্তিবাহিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিছে এই অভিযোগে খাদ্য সরবরাহের সুবিধার কথা বলে সে ইউএসএ এবং চীনের কাছ থেকে বোট এবং উপকুলগামী জাহাজ পেয়ে গেছে । যথাসময়ের এইগুলো গানবোট এবং আর্মিদের সরবরাহ যানে রূপান্তর করা হবে ।এই সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী পাক আর্মির একটি সরবরাহ বহর দখল করে ।এটা রেশন নিয়ে যাচ্ছিলো ,যার মধ্যে ছিলো বন্যায় আক্রান্তদের জন্য রেডক্রস এবং CARA এর দেওয়া ত্রাণসামগ্রী । শুধুমাত্র কম্বল ই নয় , নভেম্বরের সাইক্লোন আক্রান্তদের জন্য বিভিন্ন বৈশ্বিক সংগঠন তাবুসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিলো তা খুনী আর্মিদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছিলো ।এভাবে ভেবেচিন্তেই লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষকে জোর করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে । আক্রান্ত অঞ্চলে না দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় খাদ্য না বাইরের বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাঠানো খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী । বাংলাদেশের মানুষের সাথে এই অদ্ভুত প্রতিহিংসা নিক্সন সরকারের সম্পুর্ন জ্ঞানসারেই ঘটছিলো ।এবং খুনীর প্রতি গ্রহনযোগ্য অবস্থানের প্রেক্ষিতে তাদের একটা পক্ষপাতিত্ব সবসময় ছিলো । সামনে আসছে কঠিন মাস অক্টোবর ।নজিরবিহীন দুর্ভিক্ষ হয়তো আসন্ন । আমরা শ্রীগ্রই জানতে পারবো জাতিসংঘ এই পূর্বানুমিত ব্যাপক খুনকে নিজেদের মতো করে বিচার বিবেচনা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে যেভাবে তারা পাকিস্তানি গনহত্যাকে ক্ষমা করেছে ।কিন্তু খুনী জান্তার এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা কি স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধ্বংস করতে সফল হবে ? অবশ্যই ইয়াহিয়া এবং তার সহযোগিরা বায়াফ্রার দিকে দৃষ্টি রাখছিলো । বায়াফ্রাতে প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষই পরাজয়ের কারন ছিলো ।এইখানে ও কি একই ব্যাপার ঘটবে ?
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের জন্য দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে বিজয় লাভের খুনে যুক্তি একটি ভ্রান্ত ধারণা ।বায়াফ্রাতে সশস্ত্র বিদ্রোহিরা ফেডারেল আর্মির হাতে এমন এক জায়গায় ধরা পড়েছিলো যেটি ছিলো নাইজেরিয়ার নিকটস্থ ।অন্য কোন বন্ধু রাষ্ট্রে তারা এমনকি কোন উপসানালয় ও খুজে পায়নি । তাই দুর্ভিক্ষে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিলো । বাংলাদেশের অবস্থা ঠিক এর বিপরীত । এখানে ঔপনিবেশিক সৈন্যরা ধরা পড়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্পুর্নভাবে ঘিরে ধরেছে ,সারাদেশ আক্রান্ত অঞ্চলের অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল নয় ।প্রকৃতপক্ষে দুর্ভিখ থাক না না থাক গনপ্রজাতন্রী বাংলাদেশের জনগন ৮৫-৯০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে ।ইতিমধ্যে অক্টোবরে বিভিন্ন খাদ্য গুদামে কি পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে তা পরিমাণ কর আহয়েছে ।এখানে দখলকৃত অঞ্চলে একটি দুর্ভিক্ষ আমাদের বিজয়ের পথে কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না ।
ধ্বংসাত্মক দুর্ভিক্ষ তৈরির অপকৌশল এটা আবারো প্রমান করেছে যে ,ইয়াহিয়া শুধু অদ্ভুত খুনীই নয় ,সে একজন নিকৃষ্ট মিলিটারি কৌশলপ্রনেতা । এবং যেভাবে সে ২৫শে মার্চ ঢাকা থেকে পালিয়ে গেছে ,এটা ইতিমধ্যে প্রমান করেছে সে একজন নির্লজ্জ কাপুরুষ । আইলোক গুটিয়ে আনা জালের ভিতর ক্রমশই আটকে যাচ্ছে ।দেয়াল লিখনগুলো বড়ো হচ্ছে প্রতিদিন ।