১৫ জুলাই ,১৯৭১

শেখ মুজিব কে নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় উদ্বেগ, টিক্কাকে সম্মান!

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাস্ট্রপ্রতি শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান এবং নিয়তির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করতে এখন লন্ডনের পত্রিকা “ডেইলি টেলিগ্রাফ” বাংলাদেশ বেতারের সাথে যোগ দিয়েছে । ১৪ আগস্ট এটি একটি সংখ্যা প্রকাশ করে ,যেখানে প্রশ্ন করা হয় “শেখ মুজিবুর রহমান কি মৃত” গত কিছুদিন বিভিন্ন ঘটনায় আমাদের মতৈ এই পত্রিকার প্রধান লেখক লক্ষ্য করেছেন ২৫শে মার্চের রাতে মুজিবের স্বেচ্ছা বন্দিত্ব গ্রহণের পর থেকে তাঁর কোন বক্তব্য শোনা যায়নি শুধু ইয়াহিয়ার কিছু স্টেটমেন্ট ছাড়া ।ইয়াহিয়ার বক্তব্য ছিলো শেখ মুজিব শাস্তি পাবে এবং মুজিবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ।গত সোমবার পাকিস্তানি আর্মি বলছিলো যে , আগামি পরশু থেকেই তাঁর বিচারকাজ শুরু হবে ।সম্পাদকীয়তে আর ও প্রশ্ন তোলা হয় ,মুজিবের শাস্তি ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে কিনা । এটি আর ও জানতে চায় , অবশ্যম্ভাবী সন্দেহ যে ভিত্তিহীন,ইয়াহিয়া তা দেখাতে সক্ষম হবে কিনা । পত্রিকাটি প্রস্তাব করে বিশ্বের সবার সন্দেহ দূর করতে ইয়াহির শেখের জন্য পাকিস্তানের বাইরের একজন আইনজীবীকে নিয়োগ দিতে পারে । কিন্তু এমন একটি প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে ব্যর্থ । আন্তর্জাতিকভাবে যে সকল সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে তা হলো , শেখ মুজিব হঠাত করে একদিনের নোটিশে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন । আর্মির সোর্স থেকে পাওয়া অন্য একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় ,শেখ মুজিব কোর্টের বৈধতা মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন ।তাই কোন পরামর্শক নিয়োগে স্বীকৃত হননি ।

সম্পুর্ন

বাংলাদশের  ট্রাজেডীতে এটাই হতে পারে একমাত্র চতুর প্রচারণা । শেখ মুজিবকে চেনে এমন যে কেউই মুজিবের যুকিতে মেনে নেবে । কিন্তু এটি মিলিটারি জান্তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ও কাজ করবে ।যদি ইতিমধ্যে মুজিবকে খন করা হয়ে থাকে ,বিশ্বকে প্রতারিত করার জন্য এই কল্পকাহিনী খুব সুবিধাজনক হবে ।সেক্ষেত্রে খুনী জান্তার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ,শেখ মুজিবকে দোষী সাব্যস্ত  করে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে ।এই বিকৃতকামী প্রহসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লেগে যেতে পারে । তা সত্ত্বে ও কিছু সময় পরে নেতার বিচারকাজ স্থগিত রাখার প্রস্তাব অনুমোদিত না হওয়া বা বিচারের ফলাফল ঠিক সময়ে ঠিকভাবে জন সম্মুখে প্রকাশীত হবে ।

এর আগে ইয়াহিয়া ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছে যে ,শেখকে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখোমুখি নাও করা হতে পারে ,সে মারাও যেতে পারে যাকে সে “জেলের ভিতর স্বাভাবিক মৃত্যু” বলে অভিহিত করেছিলো । অবশ্যই সে এটা বলেনাই “ স্বাভাবিক মৃত্যু” বলতে সে কী বোঝাচ্ছে ।

যাইহোক, এই সংবাদ শেখ মুজিবের অবস্থান সম্পর্কে যেসব জল্পনাকল্পনা ছিলো তা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে ।

সেখানে ,জনগণের ধারণা ,বিচারকাজের জন্য সম্ভাব্য জায়গা হবে একটি নির্মানাধীন জেলখানা । একজন বিদেশি প্রতিনিধি রিপোর্ট করেছেন তিনি আর্মি দ্বারা সুরক্ষিত জেলখানাটি দেখেছেন । এইসব অনুমান ,বাস্তবতা ,গুজব এবং খাপছাড়া ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায় ,শেখ মুজিব বেঁচে আছেন এবং তাঁর বিচারের নামে এক হাস্যকর এবং প্রহসনের আইন পাশ করা হয়েছে ।

আর ও গুজন আছে যে ,বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত ও হতে পারে ।

আসব কিছুই ক্ষুদ্র মনে হয় যখন কেউ স্মরণ করে এই খেলায় আইনজীবি ,বিচারক ,জল্লাদ সবই একই ব্যক্তি যে জনগনকে একজন বন্দির হত্যাকে “ মৃত্যু” হিসাবে দেখাতে চায় । এখন সে বিশ্বকে বোঝানোর সড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়েছে যে বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা হলো একটি ইন্ডিয়া পাকিস্তান সংঘর্ষ ।এক ঢিলে দুই পাখি মারার উদ্দেশ্য নিয়ে সে শেখ মুজিবকে খুন করতে চায়। তাই চতুরতার সাথে এক মুখে দুরকম কথা বলে সবাইকে প্রলুব্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ।এটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংস করবে । এবং বাংলাদেশের জনগন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইন্ডিয়ার কাছে যা ছিলো এই প্রসংগে একমাত্র গ্রহনযোগ্য রাজনৈতিক সমাধান ।অন্যদিকে ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের ভিতর নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আশা করে ছিলো ।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক্তার সাথে মিলিটারি জান্তার দেওয়া আসন বাতিল করা আওয়ামীলীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতাদের তালিকার উপর নজর রাখছিলেন ।এই তালিকায় গনপ্রজানন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার গুরুত্বপুর্ন সদস্যরা ও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ।এই অন্তর্ভুক্তি দলের ভিতর অবিশ্বাসের জন্ম দিবে ,যার পরিণতিতে বাংলাদেশের জনগনের অটল ঐক্যমতে ফাটল ধরিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি উপনিবেশ থেকে নিজেদের স্বাধীন করার দৃঢ়তা ধ্বংস করবে বলে পরিকল্পিত আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় ।

যা ছিলো শিশুসুলভ । যেখানে উটপাখি পাখিও একটু চালাক হতে চেষ্টা করে যা আমরা বিশ্বাস করি তাঁর চেয়েও ।

তা সত্ত্বে ও তারা উটপাখির মতো আসন্ন বিক্ষোভ ঠেকাতে হাস্যকর ভাবে ক্ষমতাহীন ,এখনো পর্যন্ত ।

ইয়াহিয়ার জন্য সবকিছুই দেরি হয়ে গিয়েছিলো । তাঁর আত্মবিশ্বাস নোড়ে যাচ্ছিলো দ্রুত । মুজিবের মৃত্যু মানে যদি হয় বাংলাদেশের আলোচনা সাপেক্ষ স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে বাঁধা সেটা আমাদের শান্তিকাম্যি বন্ধু রাষ্ট্র সোভিয়াত ইউনিয়ন আর ইন্ডিয়া চায় ,তাহলে এইটা হবে সামরিক সমাধান । একটি সামরিক বিজয় শুধুমাত্র একটি বিশাল সম্ভাবনা ই নয় , আমাদের বীর মুক্তিযোদ্দারা এর মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আমাদের কিছু শুভাকাংখী যেমনভাবে তাঁর চেয়ে ও দ্রত গতিতে।আমাদের এখন যা প্রয়োজন তা হলো কার্যকর সহানুভতি এবং সহযোগিতা ।আমরা কখনোই চাইনা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের জনগন ছাড়া অন্য কেউ যুদ্ধ করুক ।আমরা খুব ভালোভাবেই বহিরাগত শত্রুকে পরাজিত করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি ।

ইসলামাবাদের এক রিপোর্টে জানা যায় , দুই মিলিয়ন নিরস্ত্র নারী ,পুরুষ এবং শিশুকে হত্যাকারী অননুতপ্ত টিক্কা খান “হিলাল ই কায়েদে আজম “ নামের বেসামরিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে যা ইয়াহিয়া কর্তৃক প্রদত্ত ।এটা প্রমান করে ,অদ্ভুতভাবেই বারবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় ।এক মিনিটের ভিতর জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি শান্তিপুর্ন সমাবেশে গনহত্যা চালানো জেনারেল দায়ুর লন্ডনের “ডেইলি এক্সপ্রেস “ এর “সিলভার সোর্ড অফ ভেলোর “ এ ভূষিত হয়েছিল যখন সে ইন্ডিয়া থেকে আসে ।অবশ্যই মানবতার বিরুদ্ধে টিক্কা খানের যে অপরাধ এবং বালুচের লোকের উপর ঈদের নামাজের মাঝে যে হত্যাযজ্ঞ দায়ুরের চেয়ে ও এটি আজ পর্যন্ত ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ।মারকুইসের এই অজ্ঞ শিষ্য সত্যিই এইখম্যান ডঃ মিয়োগিলি এবং হিটলারের নির্যাতন ক্যাম্পের কমান্ডোদের শ্রেনীতে পড়ে হিটলার তাদেরকে কিছু সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছিলো ,বলা নিষ্প্রয়োজন জার্মানির জনগণ এবং রাষ্ট্রের দমনই তাদের এই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিলো ।

Scroll to Top